স্বপ্নের পদ্মা সেতু, অবাক বিশ্ব
কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল এখন বাস্তবের দারপ্রান্তে। বাংলাদেশিদের কাছে যা ছিল স্বপ্ন, আজ তা বাস্তব। পদ্মা সেতু নির্মাণে বাধা ছিল অনেক। অর্থ সংস্থান নিয়ে ছিল নানা অনিশ্চয়তা। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। তারওপর বিশ্বের ব্যতিক্রম খরস্রোতা নদী পদ্মা। নদীর তলদেশে মাটির স্তরের গঠনও জটিল। এত সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মার বুকে আজ মাথা তুলে ঠাই দাঁড়িয়ে স্বপ্নের সেতু।
কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল এখন বাস্তবের দারপ্রান্তে। বাংলাদেশিদের কাছে যা ছিল স্বপ্ন, আজ তা বাস্তব। পদ্মা সেতু নির্মাণে বাধা ছিল অনেক। অর্থ সংস্থান নিয়ে ছিল নানা অনিশ্চয়তা। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। তারওপর বিশ্বের ব্যতিক্রম খরস্রোতা নদী পদ্মা। নদীর তলদেশে মাটির স্তরের গঠনও জটিল। এত সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মার বুকে আজ মাথা তুলে ঠাই দাঁড়িয়ে স্বপ্নের সেতু।
পদ্মা সেতু নিয়ে দেশে জলঘোলা কম হয়নি। ২০১২ সালের ২৯ জুন দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। একই সাথে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় এডিপি, জাইকা এবং আইডিবির মতো উন্নয়ন সহযোগীরাও। নিন্দুকেরা সে সময় দাবি করেছিলো পদ্মা সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে না সরকার। কিন্তু দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণের। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মূল সেতুর নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে সেই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নও শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে সরকার শুরু থেকে একদিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখেনি পদ্মা সেতুর। এমনকি বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দিন রাত ২৪ ঘন্টা কাছ চালিয়ে যাচ্ছে নির্মাণ শ্রমিকরা।
মূল সেতু নির্মাণ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
চলতি অর্থবছরেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে পদ্মা সেতুর জন্য। সর্বশেষ পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফায় আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। ফলে পদ্মা সেতুর বাজেট দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১শ ৯৩ কোটি টাকা।
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। স্বপ্ন হয় সত্যি। দিনের আলোয় চোখের সামনে ধরা দেয় পদ্মা সেতু। এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয় গোটা বিশ্বের কোটি কোটি বাঙ্গালী।
পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হওয়ায় গত ডিসেম্বরে মুন্সিগঞ্জে লৌহজংয়ে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। একই আয়োজন হয় সারা দেশব্যাপী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হওয়ায় আনন্দ শোভাযাত্রা হয়। তারপর থেকে স্বপ্নের সেতুটি সামনে থেকে দেখতে শুক্রবার ছুটির দিনসহ অনান্য দিনগুলোতেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ভিড় করেছিলেন অনেকে। পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখে, ছবি তুলে আনন্দে ভেসেছেন দেশবাসী।
এখন অপেক্ষা কবে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন এবং রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে পদ্মা সেতু। একই দিনে সড়ক এবং রেলপথে পদ্মা পারাপারের স্বপ্ন দেখছে দেশের মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর উপরের অংশে যানবাহন চলাচলের জন্য বেশ জোরেশোরেই চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। একই সাথে দুই পাড়ের ট্রেন লাইনের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। দুই পাড়ের সার্ভিস রোড এবং এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা এখনই পাচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। আগামী বছরের শুরু থেকে মাঝামাঝি যে কোনো সময় উন্মুক্ত হতে পারে সর্বনাশা পদ্মার বুকে গাম্ভীর্য্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পদ্মা সেতু।
প্রকৌশলনিউজ/এসআই